প্রাথমিক চিকিৎসার প্রাথমিক ধারনা
প্রাথমিক চিকিৎসার সংজ্ঞা:
ডাক্তার আসার আগে অথবা রোগীকে ডাক্তারের কাছে স্থানান্তারত করার পূর্বে আবস্মিক অসুস্থতা বা দূর্ঘটনা কবলিত ব্যক্তিকে তাৎক্ষণিক ভাবে জরুরী ভিত্তিতে যে চিকিৎসা করা হয় তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা বলে।
প্রাথমিক চিকিৎসার উদ্দেশ্য:
১)
রোগীর জীবন রক্ষা করা।
২)
রোগীর অবস্থার অবনতি রোধ করা।
৩)
রোগীর অবস্থার উন্নতি করা।
প্রাথমিক চিকিৎসার কার্যস্তর:
১)
লক্ষণ দেখে রোগ নির্ণয় (Diagnosis) প্রাথমিক চিকিৎসককে সর্ব প্রথম রোগীর বিভিন্ন লক্ষণ দেখে রোগ বা দূর্ঘটনার কারণ নির্ণয় করতে হবে।
২)
চিকিৎসা/শুশ্রুষা (Treatment) রোগীর দূর্ঘটনার কারণ বা রোগ নির্ণয় করে যত দ্রুত সম্ভব তা প্রতিকারের ব্যবস্থা করতে হবে। নির্ধারিত পদ্ধতি অনুযায়ূ অসুস্থতার চিকিৎসা শুশ্রুষা করতে হবে।
৩)
স্থানান্তর (Disposal) প্রাথমিক চিকিৎসার সর্বশেষ স্তর হলো পরিস্থিতি অনুযায়ী রোগীকে ডাক্তারের কাছে, হাসপাতালে বা তার বাড়ীতে নিরাপদে পৌঁছে দেয়া।
কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাস:
বিভিন্ন কারণে স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে গেলে নিম্মোক্ত পদ্ধতিতে শ্বাস-প্রশ্বাস ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করতে হবে। মনে রাখতে হবে শ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়া রোগীর জন্য প্রতিটি মুহূর্তই অমূল্য।
কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসের পদ্ধতি:
১)
মুখ থেকে মুখে।
২)
মুখ থেকে নাকে।
৩)
কার্ডিয়ো পালমোনারী রিসাসিটেশন (Cardio-Pulmonary Resuscitation)।
অধিক রক্তক্ষরণ বন্ধ করা:
অধিক রক্তক্ষরণ দ্রুত মৃত্যু ডেকে আনতে পারে। তাই শ্বাস-প্রশ্বাসের পরই প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য দ্বিতীয় জরুরী বিষয়টি হলো রক্তক্ষরণ বন্ধ করা
অধিক রক্তক্ষরণ বন্ধ করার পদ্ধতি:
১)
সরাসরি চাপ প্রয়োগ
২)
রক্তস্থান উত্তোলন করা (হৃৎপিন্ডের উপরে)।
৩)
চাপ ব্যান্ডেজ
৪)
রক্তচাপ বিন্দুতে চাপ প্রয়োগ।
দ্রুত ডাক্তার ডাকুন বা রোগীকে স্থানান্তর করুন
স্নায়ুবিক আধাত বা শক প্রতিরোধ:
মানুষের স্বাভাবিক শারীরিক অবস্থায় আকস্মিক পরিবর্তনই স্নায়ুবিক আঘাত বা শক। দূর্ঘটনা জনিত কারনে আঘাত প্রাপ্ত হলে বা অপ্যত্যাশিত ঘটনায় মস্তিক বা প্রধান অংঙ্গ সমূহে রক্তের চাপ কমে গেলে মানুষ শক প্রাপ্ত হয়।
শকের লক্ষণ সমূহ:
১)
চেহারা ফ্যাকাসে হয়ে যাবে।
২)
দৃষ্টি ঘোলা হতে পারে।
৩)
শরীর ঠান্ডা ও সেঁতসেঁতে হতে পারে।
৪)
দুর্বলতা।
৫)
দ্রুত
শ্বাস-প্রশ্বাস।
৬)
রোগী তৃষ্ণার্ত হতে পারে।
৭)
নাড়ীর স্পন্দন স্বাভাবিক হবে।
৮)
বমি বমি ভাব হতে পারে ইত্যাদি। রোগীকে আরামদায়ত পদ্ধিতিতে শুইয়ে দেয়াই প্রতিরোধের সহজ উপায়।
প্রাথমিক চিকিৎসকের করণীয়:
১)
রোগীকে উপযুক্ত আরামদায়ক পদ্ধতিতে শুইয়ে দেয়া।
২)
রোগীর কাপড়ের সকল বাঁধন ঢিলা করে দেয়।
৩)
রোগীকে চাদর দিয়ে ঢেবে রাখা (শরীরের নীচের অংশসহ)।
৪)
রোগীর শরীর গরম রাখার জন্য কখনোই গরম পানির বোতল ব্যবহার বা হাত পা ঘষে গরম করা উচিৎ নয়।
৫)
অজ্ঞান রোগীর মুখে কোন প্রকার তরল পদার্ধ অর্থাৎ পানীয় জাতীয় কিছু দেয়া যাবে না।
৬)
রোগীর জ্ঞান থাকলে তবে পানি, গরম চা, দুধ ইত্যাদি খেতে দেয়া যাবে। দ্রুত ডাক্তার ডাকুন বা রোগীকে স্থানান্তর করুন।
জ্ঞান হারনো:
অত্যাধিক ব্যথা, স্নায়বিক আঘাত, রৌদ্র তাপ ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে মাসুষ জ্ঞান হারাতে পারে।
করণীয় কাজ:
১) রোগীকে ছায়াযুক্ত মুক্ত বাতাসে রাখতে হবে।
২) শকের পদ্ধতিতে শুইয়ে দিতে হবে।
৩) কাপড়ের বাঁধন ঢিলা করে দিতে হবে।
৪) রোগীর ঠান্ডা লাগলে চাদর দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।
৫) অত্যধিক গরমে জ্ঞান হারালে রোগীকে বাতাস করতে হবে মাথায় পানি ঢালা যেতে পারে, শরীর ঠান্ডা ভেজা কাপড় দিয়ে মুছে দিতে হবে।
৬) কোন অবস্থাতেই অজ্ঞান রোগীকে কোন প্রকার পানীয় পান করতে দেয়া যাবে না।
পুড়ে যাওয়া:
পোড়া বিভিন্ন প্রকার হতে পারে যেমন:
১)
শুকনা পোড়া- আগুন বা উত্তপ্ত জড় পদার্থের স্পর্শে পোড়া।
২)
ভেজা পোড়া- উত্তপ্ত তরল পদার্থের স্পর্শে পোড়া।
৩)
রাসায়নিক পোড়া- রাসায়নিক পদার্থের ম্পর্শে পোড়া।
পোড়ার মাত্র ৩ প্রকার:
১) প্রথম
মাত্রা (1st Degree) যখন চামড়া ঝলসে যায় বা লাল হয়ে যায়।
২)
দ্বিতীয় মাত্র (2nd Degree) যখন পড়ে ফোসকা পড়ে।
৩)
তৃতীয় মাত্রা (3rd Degree) যখন পুড়ে গিয়ে চামড়া ও মাংস গলে যায় বা গভীর ক্ষতের সৃষ্টি করে।
চিকিৎসা/প্রতিবিধানঃ-
১)
পানি দিয়ে ক্ষত স্থানের ময়লা পরিষ্কার করতে হবে।
২)
পোড়া স্থানে ঠান্ডা পানি ধীরে ধীরে ঢালতে হবে।
৩)
পানি ঢালার ফলে ব্যথা কমে গেলে বার্নল বা ঐ জাতীয় ঔষধ লাগাতে হবে।
৪)
৩য় মাত্রার ক্ষেত্রে ক্ষত স্থানে কাপড় বা অন্য কিছু লেগে থাকলে তা টেনে সরানো উচিৎ নয়।
৫)
৩য় মাত্রার ক্ষেত্রে ক্ষত স্থান পাতলা কাপড় দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।
৬)
শক প্রতিরোধ করতে হবে।
৭)
৩য় মাত্রার ক্ষেত্রে কোন প্রকার ঔষধ লাগানো ঠিক নয়।
৮)
প্রচুর স্যালাইন পানি খাওয়াতে হবে।
দ্রুত ডাক্তার ডাকুন বা রোগীর স্থানান্তর করুন।
বিষক্রিয়া:
বিভিন্ন ভাবে মানুষেন বিষক্রিয়া হতে পারে। যেমন:-
১)
পান করার মাধ্যমে।
২)
শ্বস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে।
৩)
বিষাক্ত পদার্থের স্পর্শে।
৪)
ইনজেকশনের মাধ্যমে।
বিষক্রিয়ার প্রাথমিক চিকিৎসা:-
১)
বিষক্রিয়া অত্যন্ত মারাত্মক। রোগীকে যত দ্রুত সম্ভব ডাক্তারের কাছে হাসপাতালে স্থানান্তর করতে হবে অথবা ডাক্তার ডাকতে হবে।
২)
যে পাত্র থেকে (ঔষধ হলে তার মোড়ক) দ্রব্য খেয়ে বিষক্রিয়া হয়েছে সম্ভাবনা ক্ষেত্রে সেটি ডাক্তরের কাছে হস্তান্তর করতে হবে।
৩)
রোগী যদি অজ্ঞান অবস্থায় থাকে:
ক)
বমি করানো যাবে না।
খ)
শক্ত বিছানায় চিৎ করে শুইয়ে দিতে হবে যাতে পেটে পাচ না পড়ে এবং তার মাথা এমন ভাবে কাৎ করে দিতে হবে যাতে শ্বাস নিতে কষ্ট না হয়।
গ)
রোগী যদি নিজে থেকেই বমি করে তবে তাকে শকের পদ্ধতিতে শুইয়ে দিতে হবে যাতে করে তার বমি কন্ঠ নালীতে আটকে না থাকে।
ঘ)
শ্বাস ক্রিয়া বন্ধ হয়ে গেলে কৃত্রিম শ্বস দিতে হবে।
৪) রোগী স্বজ্ঞান থাকলে:
ক)
খেয়ে ফেলা বিষ যদি দাহ্য পদার্থ না হয় তবে রোগীকে বমি করাতে হবে। প্রয়োজনে পর্যাপ্ত পরিমান পানি খাইয়ে গলায় আৎশুল দিয়ে বমি করাতে হবে।
খ)
বিষ যদি দার্হ্য পদার্থ হয় তবে বমি করতে দেয়া যাবে না যত দ্রুত সম্ভব ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে।
হাড় ভাঙ্গা প্রতিবিধান:
ক) হাড় ভাঙ্গা অঙ্গ কোন অবস্থাতেই নাড়াচাড়া করা যাবে না।
খ) হাড় ভাঙ্গা অঙ্গ ব্যান্ডেজ ও শক্ত কাঠ বা বাঁশের চটি অথবা অনুরূপ চ্যাপ্টা যে কোন “Splint” দিয়ে শক্ত করে বেঁধে অনড় রাখতে হবে।
0 Comments