পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা / Occupational Health & Safety
পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা
পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা কি?
·
পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বলতে এমন একটিি কাজের পরিবেশকে বুঝায় যেখানে কর্মচারীগণ স্বাস্থ্যসম্মত এবং ঝুঁকি/বিপদ মুক্তভাবে তাদের দৈনন্দিন কাজ সম্পাদন করতে সক্ষম।
পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা কেন গুরুত্বপূর্ণ?
·
নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত কাজের পরিবেশ নিশ্চিত করে।
·
কর্মক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরণের পেশাগত রোগ এবং দূর্ঘটনার ঝুঁকি কমায়।
·
উৎপাদনে গতি আনে এবং উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করে।
পেশাগত স্বাস্থ্য-সংক্রান্ত বিভিন্ন ধরনের ঝুঁকি
·
রাসায়নিক ঝুঁকি - কারখানায় ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের তরল ও কঠিন রাসায়নিক পদার্থ এবং কাজ চলাকারীন সময়ে উৎপাদিত ধুলা, ধোঁয়া, বাষ্প এবং গ্যাস থেকে রাসায়নিক ঝুঁকির সৃষ্টি হয়।
·
শারীরিক ঝুঁকি - অত্যাধিক তাপ, অপর্যাপ্ত আলো, উচ্চ শব্দ, স্পন্দন, বিকিরণ এবং অপর্যাপ্ত বায়ু প্রবাহ থেকে শারীরিক ঝুঁকির সৃষ্টি হয়।
·
জীববিজ্ঞান সংক্রান্ত ঝুঁকি -ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, সংক্রাšত বর্জ, ইত্যাদি বিভিন্ন ধরণের জীবাণু থেকে জীববিজ্ঞান সংক্রান্ত ঝুঁকির সৃষ্টি হয়।
·
কারখানায় সাধারণত:
দূষিত খাবার পানি, অস্বাস্থ্যকর টয়লেট, অত্যাধিক লোক সমাগম, গরম ও আদ্র আবহাওয়া, ইত্যাদি জীববিজ্ঞান সংক্রান্ত ঝুঁকির অন্যতম কারণ।
·
মানসিক ঝুঁকি- যেকোন ধরণের মানসিক চাপ ও অবসাদ থেকে সৃষ্টি হয়। যেমন - বৈষম্য, চাকুরীর অনিশ্চয়তা, হয়রানী, নিম্নমজুরী, অতিরিক্ত উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা, দীর্ঘ কর্মঘন্টা, ইত্যাদি।
·
শ্রমিকের কাজ ও কাজের পরিবেশের সমন্বয়হীনতার ফলে সৃষ্ট ঝুঁকি-ত্রুটিপূর্ণ নকশার যšত্রপাতি এবং যান্ত্রিক কৌশল ও হাতিয়ার, অনুপযুক্ত বসার স্থান এবং কাজের স্থানের নকশার ত্রæটি অথবা নিয়ম বহির্ভূতভাবে কাজ করার অভ্যাসের কারণে স্বাস্থ্য সংক্রাšত ঝুঁকি সৃষ্টি হয়।
বিভিন্ন ধরনের ঝুঁকি থেকে সৃষ্ট স্বাস্থ্য সমস্যা
·
রাসায়নিক ঝুঁকি - ধুলা থেকে শুষ্ক কাশি ও ফুসফুসের রোগ থিনার ব্যবহারের ফলে স্নায়ুতন্ত্রের রোগ, চর্মরোগ ও লিভারের সমস্যা হয়।
·
শারীরিক ঝুঁকি - অত্যাধিক তাপ থেকে পানি শূণ্যতা, অপর্যাপ্ত আলো থেকে চোখের সমস্যা ও মাথা ব্যাথা, উচ্চ শব্দ চাপ থেকে কানে কম শোনা ও স্নায়ুবিক অবসাদ, স্পন্দনের কারণে হাড় ও হাড়ের সংযোগ স্থল ক্ষয় হওয়া।
·
জীববিজ্ঞান সংক্রাšত ঝুঁকি - জন্ডিস, ডায়রিয়া, চোখের রোগ, চর্মরোগ, স্ত্রীরোগ, যৌনবাহিত রোগ।
·
মানসিক ঝুঁকি - বিতৃষ্ণা ভাব, ক্ষুধা মন্দা, বিরক্তি, মাথা ব্যাথা, ক্লাšিত, লজ্জাবোধ, আত্মহত্যার প্রবণতা, ইত্যাদি।
·
শ্রমিকের কাজ ও কাজের পরিবেশের সমন্বয়হীনতার ফলে সৃষ্ট ঝুঁকি- মেরুদন্ডে, পিঠে ঘাড়ে, কোমড়ে ও মাংস পেশীতে ব্যথা।
কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তার মূল বিষয়সমূহ
·
অগ্নি নিরাপত্ত - কর্মস্থলে অগ্নিকান্ড প্রতিরোধে যে সকল ব্যবস্থা নেয়া হয় তাই অগ্নি নিরাপত্তা। অগ্নি নিরাপত্তার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহ হচ্ছে।
·
কাজ চলাকালীন সময়ে সকল নির্গমন পথ বাধামুক্ত ও খোলা রাখা।
·
জরুরী প্রয়োজনে বিকল্প বাতির ব্যবস্থা রাখা।
·
কার্যকরী ফায়ার এলার্ম এর ব্যবস্থা করা।
·
নিয়মিত অগ্নি মহড়ার ব্যবস্থা করা।
·
বৈদ্যুতিক নিরাপত্তা - কর্মস্থলে বৈদ্যুতিক দূর্ঘটনা প্রতিরোধে যে নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেয়া হয় তাই বৈদ্যুতিক নিরাপত্তা।
·
বৈদ্যুতিক নিরাপত্তার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহ হচ্ছেঃ
·
বৈদ্যুতিক তার এবং সুইচ বোর্ড সঠিকভাবে আবৃত রাখা।
·
সঠিক ক্ষমতা সম্পন্ন উন্নতমানের তার ব্যবহার করা।
·
অটো সার্কিট ব্রেকার সংস্থাপন করা।
·
মেইন সুইচ বোর্ড হাতের নাগালে রাখা এবং ভালভাবে চিহ্নিত করা।
·
মেইন সুইচবোর্ডের কাছে কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাস ভর্তি সিলিন্ডার ও গ্যাস মাস্ক এর ব্যবস্থা রাখা।
·
বৈদ্যুতিক লাইন ও সরঞ্জাম নিয়মিত পরীক্ষা ও মেরামতের ব্যবস্থা করা।
মেশিন নিরাপত্তা –
·
কর্মস্থলে মেশিন সংক্রান্ত দূর্ঘটনা প্রতিরোধে যে নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেয়া হয় তাই মেশিন নিরাপত্তা। মেশিন নিরাপত্তার গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সমূহ হচ্ছে-
·
নিরাপদ মেশিন ক্রয় ও সংস্থাপন করা।
·
নিয়মিতভাবে মেশিনের উৎপাদন ক্ষমতা পরীক্ষা করা।
·
মেশিনকে ঝুঁকিমুক্ত রাখা।
·
সঠিক ধরনের মেশিন গার্ড ব্যবহার করা। নিয়মিত মেশিন রক্ষণাবেক্ষণ করা।
·
প্রয়োজনীয় আত্মরক্ষামূলক সরঞ্জামাদি ব্যবহার করা।
·
মেশিনের বিপদজনক অংশ থেকে হাত বা অন্য কোন অংগ দূরে রাখা।
·
বিপদজনক মেশিন ব্যবহারের নিয়মাবলী মেশিনের কাছে টাঙ্গানো।
·
মেশিনের সাধারণ ত্রæটি দূর করার জন্য শ্রমিকদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা।
স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা- সংক্রাšত সমস্যার শনাক্তকরণ প্রক্রিয়া
·
কর্মস্থল নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা।
·
শ্রমিকদের অভিযোগ ও পরামর্শ গুরুত্বসহকারে তদন্ত ও বিশ্লেষণ করা।
·
সকল ধরণের দূর্ঘটনা ও অসুস্থতার রেকর্ড পরীক্ষা করা।
·
শ্রমিকদেরকে স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বিষয়ে প্রশ্ন করা।
·
কর্মস্থল পরিদর্শন করা।
ঝুঁকি কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব?
তিন ভাবে ঝুঁকি/বিপদ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব
·
প্রকৌশল নিয়ন্ত্রণ
·
প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ
·
আতœরক্ষামূলক সরঞ্জামাদি ব্যবহারের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ
প্রকৌশল নিয়ন্ত্রণ-
প্রকৌশল নিয়ন্ত্রণ বিভিন্ন ভাবে করা সম্ভব:
·
বর্জন - উৎপাদন প্রক্রিয়ার নির্দিষ্ট অথবা সম্পূর্ণ ঝুঁকিপূর্ণ অংশ বর্জন
·
বিকল্প - ক্ষতিকারক রাসায়নিক পদার্থের পরিবর্তে নিরাপদ বিকল্প পদার্থ ব্যবহার করা।
·
পৃথককরণ - ঝুঁকিপূর্ণ উৎপাদন প্রক্রিয়া কর্মস্থলের সকল অংশ থেকে পৃথক করা।
·
বেড়া/দেয়াল - সম্পূর্ণ ঝুঁকিপূর্ণ উৎপাদন প্রক্রিয়াকে বেড়া বা দেয়াল দিয়ে ঘিরে ফেলা
·
বায়ু চলন- কার্যকরী বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা শ্রমিকদেরকে নিঃশ্বাসের সাথে ক্ষতিকর ধোঁয়া ও বাষ্প গ্রহণ করা থেকে রক্ষ করে।
·
সারাধণ পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা – পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা কাজের পরিবেশকে নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত
রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভমিকা রাখে।
প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ –
·
প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ বিভিন্ন ভাবে করা সম্ভব:
·
শ্রম আইন ও ফ্যাক্টরী পলিসির বাস্তবায়ন:
·
সময়মত মজুরী ও অন্যান্য সুবিধা প্রদাণ ও পরিশোধ
·
কর্মসময় মেনে চলা।
·
ছুটি প্রদান।
·
কাজের ফাঁকে বিরতি দেয়া।
·
শ্রমিক ও মালিকের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন।
প্রশিক্ষণ ও উদ্বুদ্ধকরণ:
কর্মস্থলের সকল শ্রমিক, সুপারভাইজার ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার সাথে সম্পর্কিত সকল বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া এবং তা মেনে চলতে উদ্বুদ্ধ করা।
নিরাপত্তামূলক চিহ্ন :
বিভিন্ন ধরণের নিরাপত্তা বা সতর্কতামূলক চিহ্ন ব্যবহারের মাধ্যমে কর্মস্থলের ঝুঁকি অনেকাংশে কমানো সম্ভব। যথা: বিপদজনক চিহ্ন বা প্রতীক, বহির্গমন চিহ্ন, ফায়ার এলার্ম চিহ্ন ইত্যাদি।
আত্মরক্ষামূলক সরঞ্জামাদি ব্যবহারের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রন:
·
আত্মরক্ষামূলক সরঞ্জামাদি ব্যবহারকে প্রথমেই উৎসাহিত না করে ঝুঁকির উৎস নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা।
·
বিভিন্ন ধরণের ঝুঁকিপূর্ণ কাজের জন্য সঠিক ধরণের আত্মরক্ষামূলক সরঞ্জামাদি ব্যবহার করা।
·
আত্মরক্ষামূলক সরঞ্জামাকে ঝুঁকি প্রতিরোধ সর্বশেষ অবলম্বন হিসাবে বিবেচনা করা।
মালিকের দায়িত্ব
·
নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত কাজের পরিবেশ নিশ্চিত করা।
·
কারখানায় কর্মচারীগণকে স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া ও সচেতন করা।
·
স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা কমিটি গঠন করা এবং কমিটিতে শ্রমিক ও মালিক পক্ষের প্রতিনিধি রাখা।
·
নিয়মিত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বিষয়ে পর্যবেক্ষণ করা এবং যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া।
·
বিনামূল্যে আত্মরক্ষামূলক সরঞ্জাম সরবরাহ করা।
শ্রমিকের দায়িত্ব
·
স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বিষয়ক প্রশিক্ষণে অংশ গ্রহণ করা।
·
কর্তৃপক্ষের দেয়া স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা সংক্রাšত সকল নির্দেশ পালন করা।
·
ঝুঁকিপূর্ণ কাজের পরিবেশ সম্পর্কে সুপারভাইজারকে জানানো।
·
প্রয়োজন মত আত্মরক্ষামূলক সরঞ্জামাদি ব্যবহার করা।
·
কারখানার নিরাপদ ও স্বাস্থ্য সম্মত কাজের পরিবেশ বজায় রাখতে সর্বদা ববস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে সহযোগিতা করা।
0 Comments